মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ কি কি ও কত প্রকার
প্রিয় পাঠক ,আপনি যদি না জেনে থাকেন, যে মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ কি কি ও কত প্রকার।তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুই আপনার জন্য ।এই পোস্টটি জুড়ে মনোবিজ্ঞানের শাখা কি কি কত প্রকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমার লেখা পোস্টটি যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন।
তাহলে মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ কি কি? কত প্রকার সে সম্পর্কে আশা করি অনেক কিছু জানতে পারবেন । কারণ পোস্টটি গুছিয়ে লেখা হয়েছে ,কিন্তু ভাষাগুলো হয়তো বা আপনার কাছে জটিল মনে হতে পারে ।একজন মানুষ হিসেবে আপনাকে মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন।পোস্ট সূচিপত্র-মনোবিজ্ঞানের শাখা সমূহ কি কি ও কত প্রকার।
- সাধারণ মনোবিজ্ঞান
- পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান
- চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান
- শিক্ষা মনোবিজ্ঞান
- শিল্প মনোবিজ্ঞান
- বিকাশ মনোবিজ্ঞান
- শিশু মনোবিজ্ঞান
- সমাজ মনোবিজ্ঞান
- প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান
সাধারণ মনোবিজ্ঞান
সাধারণ মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যা আলোচনা করে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করে ।তাই সাধারণ মনোবিজ্ঞানকে সকল শাখার সম্মিলিত রূপ বা কেন্দ্রীয় সমন্বয় কেন্দ্র বলা যেতে পারে। আচরণ ও মানসিক কার্যাবলী সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলি যেমন - প্রেষণা , শিক্ষণ,
স্মৃতি , বিস্মৃতি , প্রত্যক্ষণ, বুদ্ধি ,চিন্তন ,সাধারণ মনোবিজ্ঞানের
বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ।মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতি সমূহ ও তাদের
উপযোগিতা, হিসেবে মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক মূল্যায়ন আচরণের জৈবিক ভিত্তি প্রভৃতি ও সাধারণ মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য সুচির আওতাভুক্ত । মোটকথা মনোবিজ্ঞানের সকল শাখার সাধারণ বিষয়গুলির প্রাথমিক আলোচনা নিয়েই সাধারণ মনোবিজ্ঞান গঠিত।
পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান
পরীক্ষন মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি মৌলিক শাখা ।পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের কারণে মনোবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের মর্যাদায় উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে ।মনোবিজ্ঞানের এ শাখায় পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয় ।পরীক্ষণ পদ্ধতিতে সুপরিকল্পিত অবস্থায় সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষণ পাত্রের উপর উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করা হয় ।
মনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবের আচরণের মৌলিক কারণ পরীক্ষণ এর মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয় ।আচরণ সম্পর্কিত প্রায় সকল তথ্যই পরীক্ষণ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। পরীক্ষণ পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।এ পদ্ধতি অন্যান্য বিষয়ে ব্যবহৃত হলেও পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানে নিজস্ব ক্ষেত্র বিষয়বস্তু রয়েছে ।
এ শাখার প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো সংবেদন ,প্রত্যক্ষণ ,শিক্ষণ ,প্রেষণা ,আচরণের জৈবিক ভিত্তি , স্মৃতি প্রভৃতির অন্তরালে ক্রিয়াশীল উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার সর্বজনীন যোগসূত্র সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিভিন্ন ধারা পদ্ধতি ও কৌশল সমূহ নিয়ে চর্চা ও গবেষণা করা। ১৮৭৯ সালে মনোবিজ্ঞানে যাত্রা শুরু হয়।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান
মানসিক রোগের চিকিৎসার ইতিহাস বেশ পুরাতন। প্রাচীনকালে মানসিক রোগীকে স্বাভাবিক মানুষ থেকে আলাদাভাবে দেখা হতো। মনে করা হতো তাদের উপর ডাইনি বা অপদেবতা ভর করেছে। বর্তমানে ওই সকল প্রাচীন ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। গড়ে উঠেছে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান। মানসিক রোগের লক্ষণ কারণ ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল বিষয়।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী প্রথমে রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করে তার কারণ অনুসন্ধান করতে সচেষ্ট হন। তারপর রোগের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন অভীক্ষা প্রয়োগ করে থাকে। রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসা পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীগণ গ্রহণ করে থাকেন।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞান
শিক্ষা মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। মানুষের শিক্ষা সংক্রান্ত আচরণের বিজ্ঞানী হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের এ শাখায় মানুষের শিক্ষা সম্পর্কিত আচরণে বিভিন্ন সমস্যার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় এবং এগুলির সমাধানে মনোবিজ্ঞানের মূল নীতিসমূহ কিভাবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত মানুষের সব ধরনের আচরণে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের
মধ্যে পড়ে। শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই
শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গড়ে ওঠে শিক্ষা ব্যবস্থা ।শিক্ষণ হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের
মূল বিষয়। তাই শিখনের গতি প্রকৃতি ধরন কলা কৌশল শর্তাবলী উপকরণ শিক্ষণ
পুরস্কার ও শাস্তির প্রভাব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্যাবলী শিক্ষার পদ্ধতি
শিক্ষার পরিবেশ প্রভৃতি শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য সূচির অন্তর্গত।
শিল্প মনোবিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলিত শাখা হলো শিল্প মনোবিজ্ঞান। শিল্প
কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করার লক্ষ্যে শিল্প মনোবিজ্ঞানের উৎপত্তি
ঘটেছে। শিল্প কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী উপযুক্ত লোক
নির্বাচন তাদের প্রশিক্ষণ পদোন্নতি ও মূল্যায়ন প্রভৃতি শিল্প মনোবিজ্ঞানের
বিষয়ভুক্ত। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে কর্মচারীদের দক্ষতা মনোবল ও কর্ম সন্তুষ্টি
ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই কর্মচারীর দক্ষতা ও মনোবল বৃদ্ধি এবং কর্মের সন্তুষ্টি
বিধান শিল্প মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য।
বিকাশ মনোবিজ্ঞান
বিকাশ মনোবিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞানের সেই শাখা যে শাখায় ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং ব্যাক্তিতে ব্যাক্তিতে সেই সকল পরিবর্তনের পার্থক্য পর্যালোচনা করা হয়। মনোবিজ্ঞানের শাখা শুধু বয়স অনুযায়ী আচরণের বিবরণ প্রদান করে তা নয়, এটি বিভিন্ন বয়সে ব্যাক্তি ভেদে আচরণে যে পার্থক্য দেখা দেয় তার অন্তর্নিহত কার্যকারণ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
বিকাশ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে বিকাশ শুরু
হয় এবং জন্ম মুহূর্ত থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষের আচরণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে
পরিবর্তন হয়। আচরণের এই পরিবর্তন বিশেষ বিশেষ বয়সে দ্রুত ঘটে আবার অন্যান্য
বয়সে পরিবর্তনের গতি মন্থর হয়। আর এরই ফলে দেখা যায় মানব আচরণের
বৈচিত্র্যতা। বিকাশ মনোবিজ্ঞানে গর্ভাবস্থা ,শৈশবকাল ,বাল্যকাল ,
বয়সন্ধিকাল বা কৈশোর যৌবন , বার্ধক্য প্রভৃতি প্রতিটি পর্যায়ে বিকাশ
ও বৃদ্ধির বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শিশু মনোবিজ্ঞান
শিশু মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা। শিশু মনোবিজ্ঞান শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা কর। গর্ভাবস্থা শৈশবকাল বাল্যকাল বয়সন্ধিকাল শিশু মনোবিজ্ঞানের পাঠ্য বিষয়ের আওতাভুক্ত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর যে শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং এই শারীরিক বৃদ্ধির ফলে তার আচরণে যে পরিবর্তন ঘটে তা শিশু মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়।
শিশুর সামাজিক পরিবেশ বিশেষ করে তার পরিবার খেলার
সাথী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে।
শারীরিক মানসিক আবেগিক সামাজিক নৈতিক বিকাশ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনায় শিশু
মনোবিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য।
সমাজ মনোবিজ্ঞান
আমি আপনি আমরা সবাই মানুষ হিসেবে সামাজিক জীব তাই না । মানুষের সামাজিক আচরণই সমাজ মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু। সমাজে বাস করার সময় একের সাথে অন্যের ভাব বিনিময় হয় পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটে। কি প্রতিক্রিয়ায় শিশুর সামাজিকরণ ঘটে ,সামাজিকরণের মাধ্যমগুলি কিভাবে কাজ করে, কিভাবে মনোভাব গড়ে ওঠে, মনোভাব কিভাবে পরিবর্তিত হয়, গুজব কিভাবে এবং কেন ছড়ায়, কিভাবে গঠিত হয় এবং কিভাবে পরিমাপ করা যায় সামাজিক পরিবেশ কিভাবে ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে ।
পূর্বসংস্কার অপরাধ এবং অপরাধ দমন এর উপায় প্রভৃতি সমাজ মনোবিজ্ঞানের
আলোচ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত ।সমাজ মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির
ব্যক্তির সাথে দলের এবং দলের সাথে দলের কি সম্পর্ক তা নির্ণয়ের চেষ্টা করে
থাকেন।
প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞানের আরেকটি ফলিত শাখা হলো প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান ।এ শাখাটি মানব প্রকৌশল নামেও পরিচিত । এ শাখার বিকাশ ঘটেছে ,বলতে গেলে , দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হতে ।প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান হল মূলত মনোবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিজ্ঞানের সমন্বিত কর্মক্ষেত্র ।এর লক্ষ্য হলো যন্ত্র কে মানুষের উপযোগী করে তৈরি করা ।অর্থাৎ যন্ত্র পরিকল্পনা এবং ওই যন্ত্র পরিচালনার জন্য ব্যক্তি বিশেষের উপযোগিতায় হলো এ শাখার প্রধান আলোচ্য বিষয় ।
শেষ কথা
সময়ের পরিবর্তন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে উন্মোচিত হয়েছে
মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্র ।তাই তো সৃষ্টি হয়েছে
মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার। এই পোস্টের মধ্যে মনোবিজ্ঞানের নয়টি শাখার কথা
উল্লেখ করা হয়েছে ।এ নয়টি শাখা ছাড়া আরও পাঁচটি শাখা আছে। এই
পোস্টটি পড়ে আপনি সামান্যতম উপকৃত হলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
পোস্টটি কেমন হয়েছে এবং পোষ্টের মধ্যে কোথায় ভুল হয়েছে কিনা কমেন্ট করে
অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন আপনি ,খোদা হাফেজ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url