বিশ্বায়নের সংজ্ঞা। বিশ্বায়নের সুবিধা ও অসুবিধা। বিশ্বায়নের প্রভাব।
সম্মানিত পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটিতে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা ,বিশ্বায়নের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি বিশ্বায়নের সংজ্ঞা ,বিশ্বায়নের সুবিধা ওঅসুবিধা সম্পর্কে না জেনে থাকেন । তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আর আপনি যদি বিশ্বায়নের সংজ্ঞা বিশ্বায়নের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য নয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বিশ্বায়নের সংজ্ঞা। বিশ্বায়নের সুবিধা অসুবিধা। বিশ্বায়নের প্রভাব।
- ভূমিকা
- বিশ্বায়নের সংজ্ঞা
- বিশ্বায়নের সুবিধা
- বিশ্বায়নের অসুবিধা
- বিশ্বায়নের প্রভাব
- লেখকের মন্তব্য
ভূমিকা
বিশ্বায়ন (Globalization) শব্দটি (Global) শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ গোলক বা পৃথিবী।Globe শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়১৫৫১ সালে এবং'Gobal' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৭৭৬ সালে। বিশ্বায়ন শব্দটির সাধারণ অর্থ হল বিশ্বব্যাপী। কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মপ্রচেষ্টা দেশীয় গণ্ডি বা ভৌগোলিক সীমারেখার বাইরে সম্প্রসারিত হলে তাকে বিশ্বায়ন বলে।
বিশ্বায়ন প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের বৈশ্বিকভিত্তিতে অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলের সাথে
একিভূত করার প্রক্রিয়া।বহুমুখী এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক ,কারিগরি
,সামাজিক ও কৃষ্টি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রাবলী।
বিশ্বায়নের প্রভাব একটি আপেক্ষিক বিষয়। এই ফলাফল নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশ্বায়নের প্রভাব মূলত -বিভিন্ন দেশ ক্ষেত্র বা অবস্থা সময় ইত্যাদি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
বিশ্বায়নের সংজ্ঞা
বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন কর্মতৎপরতা বা ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী চলতে থাকে।
বিশ্বায়ন হলো জাতীয় সীমানা ও সংস্কৃতি জুড়ে পণ্য ,প্রযুক্তি ,তথ্য এবং চাকরির বিস্তার কে বুঝায়।
বিশ্বায়ন বলতে অবিচ্ছিন্ন ও সংহত পদ্ধতিতে বিশ্বজুড়ে পণ্য সেবা ও মানুষের মুক্ত গতিশীলতাকে বুঝায়।
ব্যবসায়ের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার বিষয়ে সংগঠনসমূহের স্বীকৃতিই হলো বিশ্বায়ন।
বিশ্বায়নের সুবিধা
১।পণ্য ও সেবার অবাধ বিনিময়
বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান শর্ত হল মুক্ত ব্যবসায় সংঘটিত হওয়া। মুক্ত বাজার
অর্থনীতি ও মুক্ত ব্যবসায় নিশ্চিতকরণের জন্য পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে
উদারীকরণ নীতি ও অবাধ ব্যবসায় নীতি প্রচলন করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় পৃথিবীর
যেকোনো প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের পণ্য ও সেবা ভোগ করা যায় ।এতে মানুষের রুচি
অভ্যাস ও ভোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
২। বৃহদায়তন উৎপাদন
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার বিস্তার লাভ করে। ফলে
পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় । এমতাবস্থায়, পণ্যের উৎপাদন বহু গুণে
বেড়ে যায় ।এতে উৎপাদন ব্যয় কমে যায় এবং উৎপাদনের উপকরণগুলোর যথাযথ ব্যবহার
করা যায়।
৩। প্রযুক্তির বিকাশ
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের প্রতিটি দেশ পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগ লাভ করে। এতে
তাদের মধ্যে প্রযুক্তির হস্তান্তর করা সহজ হয়। বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলো উন্নত
দেশের প্রযুক্তি সহজে আমদানি করতে পারে। ফলে অনুন্নত দেশগুলো
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সক্ষম হয়।
৪। বাজার সম্প্রসারণ
বিশ্বায়নের অর্থ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বাজার গড়ে ওঠা। অর্থাৎ এতে যে কোন দেশ
যেকোনো সময় পৃথিবীর যেকোনো বাজারে প্রবেশের অধিকার লাভ করে । ফলে পণ্য ও সেবার
বাজার সম্প্রসারিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়-নাফটা, আসিয়ান, ইউরোপীয়
বাজার প্রভৃতি বিশ্বায়নের ফলশ্রুতি।
৫। দারিদ্র দূরীকরণ
বিশ্বায়নের ফলে ধনী ও উন্নত দেশগুলো অনুন্নত দেশে বিনিয়োগ করে থাকে। এতে অনুন্নত দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে অনুন্নত দেশগুলো বেকারত্ব হ্রাসের মাধ্যমে দারিদ্র দূর করতে সক্ষম হয়।
৬। শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশ
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের আদান প্রদান হয়ে
থাকে। এতে উন্নত দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি জ্ঞান বিজ্ঞান অনুন্নত দেশ প্রসারিত
হয়।
৭। শ্রমের অবাধ গতিশীলতা
বিশ্বায়নের ফলে শ্রমের বাজার অবাধ হয়ে যায়। অর্থাৎ এতে খুব সহজেই এক দেশের শ্রমিকগণ অন্য দেশে শ্রম বিক্রি করতে পারে। ফলে শ্রম ব্যবহারকারী ও শ্রম প্রদানকারী উভয় দেশ লাভবান হয়।
বিশ্বায়নের অসুবিধা
বিশ্বায়নের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকা শর্তেও এ প্রক্রিয়া সীমাবদ্ধতা বা
অসুবিধা থেকে মুক্ত নয়। বিশ্বায়নের অসুবিধা সমূহ নিচে দেওয়া
হলো-
১। পুঁজিবাদের প্রাধান্য
বিশ্বায়নের সুযোগে সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদ শক্তিশালী হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর ধনী ও
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে এনে
শোষণ করতো বিশ্ব পুঁজিবাদকে শক্তিশালী করছে।
২। অসাধু প্রতিযোগিতা
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে উন্নত দেশসমূহ সস্তায় উন্নত
মানের পণ্য সামগ্রী অনুন্নত দেশে রপ্তানি করবে ফলে গরিব ও অনুন্নত দেশের
শিল্পসমূহ ধ্বংসের সম্মুখীন হওয়া উপায় ছাড়া থাকবে না।
৩। অর্থনৈতিক শোষণ
উন্নত ও ধ্বনি দেশগুলোর পক্ষে কেবল উন্নত প্রযুক্তি ও কলা কৌশল ব্যবহার করে উন্নত
মানের পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা এবং সেগুলো অনুন্নত ও গরিব দেশগুলোতে বিক্রয় করে
মুনাফা লুট করে নেয়া সম্ভব হবে। ফলে ধনী দেশগুলোর হাতেই সম্পদ জমা হতে থাকবে এবং
অনুন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত হবে।
৪। মেধা ও সম্পদ পাচার
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শ্রম ও সম্পদের অবাধ চলাচলের সুযোগ গ্রহণ করে উন্নত দেশ
সমূহ গরিব ও অনুন্নত দেশ হতে নামমাত্র মূল্যে শ্রম ও সম্পদ ক্রয় করে নিজ দেশের
উন্নয়নের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করবে। ব্যবহারকারী ধনী দেশই লাভবান হবে।
৫। দেশীয় সংস্কৃতির অবক্ষয়
বিশ্বায়নের ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরাট নৈরাজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে। অত্যাধুনিক
প্রযুক্তি ও কলা কৌশলের মাধ্যমে উন্নত দেশ সমূহ ধর্মীয় মূল্যবোধহীন অপসংস্কৃতি
অনুন্নত দেশ সমূহে ছড়িয়ে দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে। ভিনদেশীয়
সংস্কৃতির আমদানির ফলে সামাজিক অস্থিরতার জন্ম নিচ্ছে।
৬। দেশী শিল্প ধ্বংস
বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশ তার উৎপাদিত পণ্য উন্নয়নশীল দেশের বাজারে অবাধে
ক্ষেত্রবিশেষ ডাম্পিং দিয়ে প্রবেশ করাচ্ছে। ফলে দেশীয় শিল্প বাজার
হারাচ্ছে ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
৭। দারিদ্র দূর হয় না
বিশ্বায়নের দারিদ্র দূরীকরণের কথা জোরেশোরে বলা হলেও বাস্তবে উন্নয়নশীল দেশের
দারিদ্র দূর হয় না। কারণ বিশ্বায়নের ফলে খারাপ পরিস্থিতির সাথে উন্নয়নশীল
দেশগুলো সমন্বয় করতে পারেনা ।ফলে দেশে বেকারত্ব ওদারিদ্র বৃদ্ধি পায়।
৮। সংস্কৃতির অবাধ প্রসার
বর্তমানে সংস্কৃতির অবাধ প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংস্কৃতির প্রসারের ফলে আজ
গোটা বিশ্বের মানুষ একই ঐক্য সূত্রে আবদ্ধ। ফলে প্রকারান্তরে
বিকাশ সাধিত হচ্ছে বিশ্বায়নের ধারণার।
আলোচনার শেষে বলা যায়, বিশ্বায়নের পক্ষে জোরালো যুক্তি থাকা শর্তেও এ
প্রক্রিয়ায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ
নিশ্চিতভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
বিশ্বায়নের প্রভাব
১। মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশ
বিশ্বায়নের ধারণার সাথে মুক্ত বাজার অর্থনীতির সম্পর্ক অনেকটা সুদূরপ্রসারী।
মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে সারা বিশ্বের বাজার ব্যবস্থা এখন সকলের কাছে উন্মুক্ত
হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় যার পণ্যের মান ভালো সেটিকের থাকছে আর অন্যরা
ছিটকে পড়ছে। আর বিশ্বের বাজার অর্থনীতির এ অবস্থার জন্য লক্ষণীয় বিষয় হলো
বিশ্বায়ন।
২। শিল্প ক্ষেত্রে পরিবর্তন
বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থা লগ্নের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আর কয়েক দশক আগের
শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করলে বিশ্বায়ন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা
পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের শিল্পক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার
সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যার শিল্প যত উন্নত সে ততো উন্নতি সাধন করতে পারছে অন্যরা
ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
৩। কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন
বিশ্বায়নের ফলে শিল্পক্ষেত্র ছাড়া কৃষি ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা
যাচ্ছে। কারণ, সারা বিশ্বে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি এখন সকলের নাগালের
কাছে। তবে এক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি দূর অগ্রসর
হচ্ছে।
৪। উন্নত দেশগুলোর সুবিধা
বিশ্বায়নের ফলে সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বিজয়ের আলোকবর্তিতা অতি সহজে
ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। কারণ বিশ্বায়নের স্রষ্টা তো তারাই। তাহলে সুবিধা যে,
তারা বেশি পাবে তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। অন্যদিকে, বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের
উন্নয়নমুখী দেশগুলো অবাধ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পিছনে পড়ে যাচ্ছে।
৫। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি
তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের বিরাট প্রভাব রয়েছে। কারণ, অবার
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে যে দেশ যত প্রযুক্তির দিকে অগ্রগামী তারা ততো উন্নয়ন
করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে এতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পিছনে পড়ে থাকছে
উন্নয়নশীল দেশগুলো।
লেখক এর মন্তব্য
মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমি এই আর্টিকেলটি লিখতে সক্ষম হয়েছি। তবে আশা
করি এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আপনার কথা বিবেচনা করে এই আর্টিকেলটির
মধ্যে অত্যন্ত সহজ, সরল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। আর্টিকেলটি লিখতে বইয়ের
সাহায্য নেয়া হয়েছে। সেজন্য সেই সব শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ,গবেষক ,প্রকাশকদের নিকট
চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা শর্তেও অনেক সময় কিছু
কিছু ত্রুটি থেকে যাই। আপনার যে কোন গঠনমূলক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা
হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url