ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য জেনে নিন
প্রিয় পাঠক ,এই আর্টিকেলটিতে ছাত্র সমাজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য নয় আর আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
পেজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃছাত্র সমাজের দায়িত্ব-কর্তব্য জেনে নিন।
- ভূমিকা
- ছাত্রজীবনের স্বরূপ
- ছাত্রজীবনের কর্তব্য
- ছাত্র জীবনের দায়িত্ব
- দেশাত্মবোধ
- রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন
- ছাত্র জীবনের নিয়মানুবর্তিতা
- নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠন
- ছাত্র জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব
- লেখকের শেষ কথা
ভূমিকা
ছাত্রজীবনের স্বরূপ ,ছাত্র জীবনের কর্তব্য, ছাত্র জীবনের দায়িত্ব,দেশাত্ববোধ,রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন, ছাত্র জীবনে নিয়মানুবর্তিতা,নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠন,ছাত্র জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব এগুলো নিয়ে আলোচনা করব আপনার সাথে।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ
ছাত্রদের প্রথমেই বোঝা দরকার -ছাত্ররা পাঠাভ্যাস করে বলেই
ছাত্র।ছাত্রের কর্তব্য এমনভাবে নিজেকে গঠন করা ,যাতে সে মানুষ হয়ে উঠতে পারে
মানুষ হয়ে উঠতে পারে ।তাই ছাত্র জীবনের মূল কর্তব্য মনুষ্যত্বের সাধনা ছাত্রই
দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক ।আজকের ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব কাধে তুলে নিবে।
তাই জীবন গঠনে ছাত্র জীবন অত্যন্ত মূল্যবান ।জ্ঞান বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে
নিজেদের যোগ্য করে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনে ।ছাত্র জীবন প্রস্তুতির জীবন ।এরই উপর
নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা -ব্যর্থতা ।নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের
গতি -প্রকৃতি।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য
ছাত্র জীবন কর্মজীবনের প্রবেশের প্রস্তুতি পর্ব ।জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগী একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য । অধ্যায়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হওয়া উচিত ।তবে পড়াই একমাত্র তপস্যা নয় এর সাথে চাই শরীর গঠন ।ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে 'A sound mind is sound body' অর্থাৎ সুস্থ দেহই সুন্দর মন।কিংবা স্বাস্থ্যই সম্পদ ।এই দেহ মন সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য। এজন্য পরিমিত আহার নিয়মিত ব্যায়াম ও সময়মতো খেলাধুলা করা প্রয়োজন।সেই সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ।এগুলো সবই শিক্ষার অঙ্গ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়ঃ
'অন্য চাই প্রাণ চাই আলো চাই ,চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।'
তাছাড়া অধ্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানব চরিত্রের নানাবিধ সৎগুণাবলী ও অর্জন
করতে হবে ।যেমন বাবা-মা শিক্ষক গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি সততা কর্তব্য
নিষ্ঠা সময়ের সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি যা কিছু মন্দ ও অকল্যাণকর তা ছাত্র জীবনে
ত্যাগ করা উচিত ।আর এই উদ্দেশ্য সাধন শুধু বই পড়ে অর্জন করা সম্ভব নয় ।ছাত্র
জীবনেই সমাজ দেশ ও বহির্বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব
জন্মের সময় আমরা কিছু ঋণ বা দায়িত্ব নিয়ে জন্মাই না হলে আমাদের জীবন রক্ষা করা অসম্ভব হত।এ ঋণ প্রথমত মা-বাবার কাছে ,অভিভাবক ও পরিবারের অন্য সকলের কাছে।কাজেই ছাত্র জীবনের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে মাতা পিতার উপদেশ অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করা,চরিত্র গঠন করা। এর পরই ছাত্র তার শিক্ষক অধ্যাপক বর্গের নিকট ঋণী।সুস্থ ছাত্র জীবনের প্রয়োজনেই ছাত্রকে শিক্ষক ও অধ্যাপকের উপদেশ ও নির্দেশ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে ।
দেশের অগণিত জনসাধারণের অর্থ সাহায্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে তাই দেশ প্রীতি
সামাজিক কর্তব্য পালন জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ প্রত্যেক ছাত্রেরই অবশ্য
পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য ।ছাত্র সমাজের দায়িত্ব শুধু পড়াশোনার মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকে না।সমাজ ও দেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার জন্য ছাত্রসমাজকে সঠিক পথ
অনুসরণ করতে হবে।আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্র সমাজের
দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
দেশাত্মবোধ
দেশ ও জাতি তথা সমাজের কল্যাণ সাধনই ছাত্র জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।ছাত্রসমাজকে দেশাত্মবোধে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।দেশপ্রেম ,জনগণের প্রতি ভালোবাসা , সেবাপরায়ণতা স্বাবলম্বন ,অধ্যবসায়,ধর্মপরায়ণতা ,ধৈর্যশীলতা ,উদারতা প্রভৃতি গুণের অধিকারী হতে হবে।স্বার্থত্যাগ জনসেবা ও দেশপ্রেমের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তা দেশ ও জাতির জন্য হবে কল্যাণকর মনে রাখতে হবে কাজী নজরুল ইসলামের এই বাণী
'মোদের চক্ষে জলে জ্ঞানের মশাল বক্ষে ভরা বাক
কন্ঠে মোদের কুন্ঠাবিহীন নৃত্য কালের ডাক
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল /আমরা ছাত্রদল'।
রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন
দেশ ও জাতি গঠনের সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তারাই পারে সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে
আসতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ছাত্র সমাজের অবদানের কথা স্মরণ
করা যেতে পারে।ছাত্র সমাজকে রাষ্ট্রের ও কল্যাণমূলক কাজে অবশ্যই যোগদান করতে
হবে।দেশ ও জাতির দুর্যোগে যথাশক্তি প্রয়োগ করে অশুভ শক্তির কবল থেকে দেশকে রক্ষা
করা ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্ব।
ছাত্রজীবনের নিয়মানুবর্তিতা
ছাত্রজীবন নিয়মানুবর্তিতার একটি প্রকৃষ্ট প্রয়োগ ক্ষেত্র ও উপযুক্ত
সময়।সুপরিকল্পিত এবং সু সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মাবলির অধীনে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর
ব্যক্তি জীবন এবং ছাত্র জীবন পরিচালিত হলে সে জীবনে কাঙ্খিত সাফল্য আসতে
বাধ্য।নিয়ম মেনে চলতে হবে পাঠদানে পাঠগ্রহণে অধ্যায়নে তথা শিক্ষাঙ্গনের
সার্বিক অবকাঠামোয়। ছাত্রসমাজের কাছে আজও এই নিয়মানুশীলন মানুষের এক মহৎ
কর্তব্য ।
নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠন
প্রথমে আমরা দৃষ্টি দিই নৈতিক মূল্যবোধ বলতে কি বুঝি ?নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের জীবনে অনুসরণযোগ্য এমন কিছু আচরণ বিধি যা মানুষের জীবন ব্যবস্থা ও জীবন পদ্ধতিকে করে তুলে সুন্দর নির্মল।এর সঙ্গে জড়িত আছে সততা ,কর্তব্য ,নিষ্ঠা শ্রম উত্তম চরিত্র শিষ্টাচার ,সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা,অধ্যবসায় সর্বোপরি সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত হয় ইত্যাদি বিশেষ কতকগুলো গুণ।
নৈতিক মূল্যবোধ মানব
চরিত্র কে করে তোলে সুন্দর ।তাই মানুষের আত্মিক সামাজিক উৎকর্ষের জন্য এবং জাতীয়
উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের লালন ,চর্চা ও
বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব আছে।ছাত্র জীবনেই এই গুনাবলী আপনাকে অর্জন করে উত্তরকালে
চরিত্র গঠন করতে হবে।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব
ছাত্রজীবন হলো শিষ্টাচার ও সৌজন্য আহরণের যথার্থ কাল ।ছাত্র জীবনে গুরুজনদের যে শ্রদ্ধা করতে শিখলো না ,যার ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত ,যার ব্যবহারে সহপাঠীরা বিরক্ত পরবর্তী জীবনেও তার একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে।তখন সে হয় অশুভ শক্তি অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক ।
অপরদিকে বিনয়ী ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ কেড়ে নেয় না সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ তার সাহায্য পায়।শিষ্টাচারের অভাবে ছাত্র হয়ে ওঠে স্বার্থপর এবং পাষাণ ধ্বংস করে তার প্রেম ,মমতা।সহানুভূতি দয়া ইত্যাদি।এই অভাবই তাকে ঠেলে দেয় অন্যায় অসত্যের চোরা অন্ধকারে।সেই অন্ধকার শুধু ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করেনা, গ্রাস করে গোটা সমাজকে।
লেখকের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠ্যক ,এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সামান্যতম উপকৃত হলে আপনি আপনার মতামত
কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন। এ ধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে চাইলে
নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে
আমার লিখা আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url